আল মাসুম সবুজ
সিনিয়র ক্যামেরা জার্নালিস্ট
সংবাদকর্মীদের প্রায়ই এমন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়, যেখানে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে যায়—আর সাংবাদিকদের সেখানে উল্টো দিকে ছুটতে হয়। এই কারণে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। সামান্য অসতর্কতা বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
নিজে নিরাপদ থাকা এবং আপনার ইকুইপমেন্ট অক্ষত রেখে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেওয়াই আসল পেশাদারিত্ব।
কোনো প্রতিষ্ঠান কখনোই নিজের জীবন বিপন্ন করে সংবাদ সংগ্রহ করতে বাধ্য করে না—এটি মনে রাখবেন।
একটি জীবনের ওপর নির্ভর করে আরও কয়েকটি প্রাণ—তাই সতর্কতার বিকল্প নেই।
ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে করণীয়
১. ঝুঁকি–নিরাপত্তা ফর্ম পূরণ করা
অনেক দেশে সংবাদ সংগ্রহের আগে ঝুঁকি মূল্যায়ন ফর্ম বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশে এই ফর্ম ব্যবহারের প্রচলন না থাকলেও প্রতিষ্ঠানগতভাবে এটি করা উচিত।
এতে উল্লেখ থাকে—
সম্ভাব্য ঝুঁকি
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঝুঁকি ভাতা
আইনগত জটিলতা হলে দায়িত্ব কার
২. ঘটনাস্থলের ভৌগোলিক ধারণা নেওয়া
ঘটনার স্থান সম্পর্কে আগেই ধারণা নিন, যেন প্রয়োজন হলে নিরাপদে বের হওয়ার পথ জানা থাকে।
৩. সংঘর্ষের সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ
আন্দোলনকারী বা নিরাপত্তা বাহিনী কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে কিনা, তা আগেই অনুমান করুন।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরিধান করুন—
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট
হেলমেট
মজবুত জুতা/কেডস
টিয়ারগ্যাস প্রতিরোধক ব্যবস্থা ইত্যাদি।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে করণীয়
১. নিরাপদ স্থান থেকে চিত্র ধারণ
স্টিল ফটোগ্রাফারের তুলনায় ভিডিও সাংবাদিকদের জুম লেন্সের সুবিধা বেশি—তাই যতটা সম্ভব নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
২. পিকেটিং কভারেজে অবস্থান নির্বাচন
পিকেটিং হলে নিরাপত্তা বাহিনীর পেছনে—ডানে বা বামে—অবস্থান নিলে তুলনামূলক ঝুঁকি কম থাকে।
৩. উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মন্তব্য পরিহার
আন্দোলনকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী দু’পক্ষই মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকে—
এসময় কোনো মন্তব্য বা আচরণ করবেন না যা তাদের আরো বেশি উত্তেজিত করতে পারে।
৪. এক জায়গায় দীর্ঘসময় অবস্থান নয়
সময় শেষে স্থান পরিবর্তন করুন এবং একা একা বিচ্ছিন্ন স্থানে যাবেন না—দলবদ্ধভাবে চলা নিরাপদ।
৫. অগ্নিকাণ্ড কভারেজে অতিরিক্ত ঝুঁকি নয়
ফায়ার সার্ভিসের কমান্ডারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন
নির্দিষ্ট নিরাপদ অঞ্চল থেকে চিত্র ধারণ করুন
কোনক্রমেই অগ্নিনির্বাপক দলের কাজে বিঘ্ন ঘটাবেন না।
৬. সন্ত্রাসী হামলা (টেরোরিজম) কভারেজে বাড়তি সতর্কতা
সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময় গুলি বা বিস্ফোরক নিক্ষেপ করতে পারে—
তাই এমন স্থানে অবস্থান নিন যেখান থেকে কাজও হয় এবং ঝুঁকিও কম।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বা নিরাপত্তা বাহিনীর পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
বোমার বিস্তৃতি বা বিপদের মাত্রা আপনি জানেন না—তারা জানে।
যদি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পাওয়া না যায়, সাধারণ নিরাপত্তা বাহিনীর কাছাকাছি অবস্থান করুন।
সর্বোপরি
সংবাদ সংগ্রহের প্রতিটি ঘটনা আলাদা—স্থান, পরিস্থিতি, পরিবেশ সবক্ষেত্রেই ভিন্ন।
সুতরাং প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি, সতর্কতা ও মানসিক স্থিরতাই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।